Thursday, December 7, 2017

ভালো থাকুক চুল

স্টাইলিং টুল চুল বিপন্ন করে তোলে। কিন্তু এড়ানোর উপায় তো নেই। তাই দরকার সঠিক পরিচর্যা। চুল সুস্থ আর সুন্দর রাখার জন্য

আজকে চুল সটান সোজা তো কালই কার্লি। কখনো স্প্রে দিয়ে করা চুলের আলুথালু অগোছালো স্টাইলটাই ট্রেন্ডে তো কখনো মুজ আর জেল মাখানো স্লিকএমনতর চর্চায় মুখর সৌন্দর্যবিশ্ব। হেয়ার স্টাইলিংয়ের হেরফের পছন্দ সবারই।

সে জন্যই হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার আর কার্র্লিং আয়রনের মতো টুলের পাশাপাশি স্প্রে, মুজ আর জেলের ব্যবহার হচ্ছে হরহামেশাই।এতে স্টাইলিংটা হচ্ছে পারফেক্ট, মনের মতো।
কিন্তু চুলে যে বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে, সে খেয়াল আছে? ফলাফল- চুলের ভেঙে যাওয়া, নেতিয়ে পড়া, শুষ্ক ও অমসৃণ হয়ে ওঠা।কিন্তু চুলে যে বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে, সে খেয়াল আছে?

ফলাফল- চুলের ভেঙে যাওয়া, নেতিয়ে পড়া, শুষ্ক ও অমসৃণ হয়ে ওঠা।
কেরাটিন প্রোটিন এবং হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে তৈরি। হেয়ারস্টাইলিং টুলগুলো ব্যবহারে এই হাইড্রোজেন বন্ড ভেঙে যায়। ফলে চুলের প্রাকৃতিক টেক্সচার পাল্টে ফেলা যায়। সাজিয়ে নেয়া যায় মনের মতো করে। কিন্তু এতে চুলের প্রাকৃতিক কেরাটিন প্রোটিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে চুল তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাতে শুরু করে। তাই বলে যে হেয়ারস্টাইলিং টুল আর প্রডাক্টগুলো দূরে সরিয়ে রাখবেন, তা নয়। বরং সামান্য সচেতন হলে ক্ষতির হাত থেকে অনেকাংশেই রক্ষা পাবে চুল। স্টাইলিং হবে ড্যামেজ ফ্রি।


বাছতে হবে ভালোটা

মানসম্পন্ন হেয়ারস্টাইলিং টুল ও প্রডাক্ট চুলে ক্ষতির আশঙ্কা কমিয়ে দেয় অনেকখানি। তাই এগুলো কী দিয়ে তৈরি, তা আগে থেকে যাচাই-বাছাই করে নেয়া ভালো। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা তিন ধরনের ম্যাটেরিয়ালে তৈরি স্টাইলিং টুলের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। প্রথমটা সিরামিক। এতে তৈরি স্টাইলিং টুলগুলো হিট কনডাক্টর হিসেবে দারুণ। এগুলো চুলের খুব কম ক্ষতি করে। ফলে ভঙ্গুর এবং ক্ষতিগ্রস্ত চুলের স্টাইলিংয়ে সিরামিক টুলগুলো যথেষ্ট জুতসই। টার্মালাইনে তৈরি স্টাইলিং টুলগুলো সমানভাবে তাপ ছড়ায় চুলে। ফলে খুব কম সময়ে স্টাইলিং সেরে নেয়া যায়। ক্ষতির আশঙ্কাও কমে যায় অনেকখানি। টাইটেনিয়ামের টুলগুলোর দামটা চড়া হলেও চুলবান্ধব। এটা চুলের একদম উপরের স্তরে সুরক্ষা দেয়। ফলে ভেতরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। উজ্জ্বলতা দেয়ার পাশাপাশি চুল সুন্দরভাবে সেট রাখতেও টাইটেনিয়ামে তৈরি টুলগুলো বেশি কার্যকর। এ ছাড়া স্টাইলিং টুলগুলোতে হিট সেটিং অপশন আছে কি না, তা দেখে নেয়া ভালো। ফ্লাট আয়রন কিংবা স্ট্রেইটনারগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। ১৭৫ থেকে ৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত অপশন থাকলেই চলবে। এতে চুলের প্রয়োজনমতো তাপমাত্রা সেট করে নেয়া যায়। ফলে ক্ষতিটাও কম হয়। আর কার্লার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ব্যারেলের মাপ সঠিক হওয়া জরুরি। এতে স্টাইলিং সহজ হয়। ক্ষতির আশঙ্কাও কাটে অনেকখানি। খুব ঘন কার্ল চাইলে ছোট চিকন ব্যারেলের কার্লিং আয়রন উপযুক্ত। আর লুজ ওয়েভি লুকের জন্য বড় মোটা ব্যারেলের কার্লিং আয়রন জুতসই। ব্লো ড্রায়ারের বেলায় নজল দেয়া প্রফেশনাল ড্রায়ারগুলো বেশি ভালো। এগুলো শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ নিশ্চিত করে। আর নজল অ্যাটাচমেন্ট থাকলে চুলের নির্দিষ্ট জায়গায় ধরে ব্যবহার করা যায়। ডিফিউচার থাকলে তো আরও ভালো। এটা হেয়ার ড্রায়ারের বাতাস সবদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। ফলে স্টাইলিংয়ে সময় বাঁচে। ক্ষতিও কম হয়।

সঠিক সেটিং


মজবুত হলে সে অনুযায়ী টেম্পারেচার বাড়াতে হবে। তবে কোনোভাবেই সেটা যেন ৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে না ওঠে। আর ড্যামেজ এড়াতে আরেকটা পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। বেশি তাড়াহুড়া না করে, একটু সময় ব্যবহার করা যেতে পারে টুলগুলো। চুল সেকশন করে নিয়ে কয়েক সেকেন্ড ধরে যদি স্টাইলিং সেরে নেয়া যায়, তাহলে হিট সেটিং লো রাখলেও খুব একটা সমস্যা হয় না। এতে চুলও ক্ষতি থেকে বেঁচে যায় অনেকখানি।

শুরুতেই সুরক্ষা

হিট স্টাইলিংয়ের শুরুতেই থার্মাল প্রটেকশন জরুরি। স্প্রে, ক্রিম কিংবা মুজ ড্যামেজ থেকে বাঁচাতে শুধু প্রতিরক্ষামূলক বেষ্টনী তৈরি করবে না, চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা রক্ষা করবে। চুল কোমল রাখবে, যোগ করবে বাড়তি উজ্জ্বলতা। হিট প্রটেকশন স্প্রেগুলো মূলত দুই ধরনের সিলিকন সাইক্লোমেথিকন এবং ডাইমেথিকন দিয়ে তৈরি হয়। চুলের ধরন অনুযায়ীও বেছে নেয়া যেতে পারে হিট প্রটেকশন প্রডাক্ট। অ্যালকোহলভিত্তিক পণ্য শুষ্ক চুলের জন্য নয়, এগুলো তৈলাক্ত চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে। সিলিকন বেজড প্রডাক্টগুলো শুষ্ক চুলের জন্য উপযোগী। তৈলাক্ত চুলেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সিলিকনের মাত্রা যেন কম থাকে। ভিটামিন কিংবা গ্রেপ সিড, কোকোনাট, অ্যাভোকাডো সানফ্লাওয়ার, অলিভের নির্যাসযুক্ত হেয়ার প্রটেকশন প্রডাক্ট যেকোনো ধরনের চুলের জন্য উপযুক্ত অপশন। এগুলো হিট ড্যামেজ থেকে প্রতিরক্ষার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় চুল সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।


ইনটেনসিভ হেয়ার কেয়ার

যাদের নিয়মিত হিট স্টাইলিং টুল আর প্রডাক্ট ব্যবহার করতে হয়, তাদের নিয়ম করে চুলের যত্ন নেয়া উচিত। কারণ, নিয়মিত এগুলোর ব্যবহারে চুল রুক্ষ, শুষ্ক আর অনুজ্জ্বল হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে এক থেকে দুদিন চুলে আলট্রা নারিশিং মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। একদম চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত। শ্যাম্পু করার পর পাঁচ থেকে দশ মিনিট এগুলো মাখিয়ে রাখতে হয়। তারপর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিলেই চলবে। মাস্ক বাছাইয়ের সময় ডিপ ইনটেন্স কন্ডিশনিং কিংবা ময়শ্চারাইজার যুক্ত প্রডাক্টগুলো বেছে নেয়াই ভালো। এগুলো চুলের গভীরে ঢুকে পুষ্টি জোগায়। চুলের ক্ষতি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। মাসে একবার প্রফেশনাল ট্রিটমেন্টও নেয়া যেতে পারে। স্যালনে গিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে প্রোটিন কিংবা অন্য যেকোনো বিশেষায়িত ট্রিটমেন্ট যদি নিয়ম মেনে করা যায়, চুল দীর্ঘদিন সুস্থ ও সুন্দর থাকবে। এ ছাড়া নিয়মিত হেয়ার কেয়ার রুটিনে লিভ ইন সেরাম কিংবা ক্রিম ব্যবহার করা ভালো। সিরামাইড আর প্রো কেরাটিনযুক্ত প্রডাক্টগুলো চুলের ভেঙে যাওয়া রোধ করে, ফাটা চুল মসৃণ করে তোলে। হিট স্টাইলিংয়ের ফলে শুষ্ক, রুক্ষ চুলের উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।




Content Credit:Canvasmagazine



No comments:

Post a Comment