Sunday, December 3, 2017

মেকআপ নিয়ে ঘুম নয়


ত্বকের জন্য মস্ত ঝুঁকি মেকআপ নিয়ে রাতভর ঘুমানো। সুতরাং ঘুমের আগে সঠিক পদ্ধতিতে পরিষ্কার করে নেয়া জরুরি






সৌন্দর্যসচেতন নারীদের বেশির ভাগই মেকআপ ছাড়া কোথাও বের হবার কথা আজকাল ভাবতে পারেন না। কিন্তু সমস্যা হলো যখন তা সময়মতো পরিষ্কার করা হয় না। মেকআপ ব্যবহারের অলিখিত একটা শর্ত হলো, প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে তা এমনভাবে তুলে ফেলতে হবে যেন একদানাও মুখত্বকে অবশিষ্ট না থাকে। অধিকন্তু মেকআপ মুখে নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া একেবারেই অনুচিত। এটি মোটামুটি সবাই জানলেও এর ক্ষতি সম্পর্কে বেশির ভাগ নারীই অসচেতন।
কেউ কেউ আবার মনে করেন, মুখটা ধুয়ে নিলেই হলো, চোখে কাজল বা ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক থাকলে তেমন কোনো সমস্যা নেই। ভুল ধারণা। ফাউন্ডেশন, কনসিলার, মাসকারা, লিপস্টিক- যা-ই থাকুক না কেন, নিখুঁতভাবে তুলে ফেলা চাই। নইলে ত্বকে যা ঘটবে, আফসোস করা ছাড়া উপায় থাকবে না। সেলিব্রিটি ডারমাটোলজিস্ট ড. এ্যানি চিউর মতে, মেকআপ ত্বকের উপর আলগা একটি পরত সৃষ্টি করে। সেটি না ওঠানো হলে ত্বকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র বা পোরগুলোতে ময়লা প্রবেশ সেসবের মুখ বন্ধ করে দেয়। যা থেকে ক্রনিক ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ হবার আশঙ্কা থাকে। মৃতকোষ, ময়লা, তেল- সব মিলেমিশে সবচেয়ে বেশি যা হবার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে, তা হলো ব্রণ। তার মতে, বিশ্বব্যাপী বেশির ভাগ নারীর মুখে ব্রণ হবার এটি প্রধান একটি কারণ।

থাকলে ত্বকের রঙ নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে, কথাটা অনেকেরই বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। কিন্তু ড. চু-এর মতে, মেকআপ মুখে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সকালে ঘুমচোখে আয়না দেখলে প্রথমেই যে জিনিসটি নজরে আসবে, তা হলো স্কিনের ডালনেস। রাতভর মেকআপের আলগা পরত বালিশের ঘর্ষণে ত্বকে ভালোভাবে বসে যায়। তাতে চেহারা স্বাভাবিকের তুলনায় ম্যাট হয়ে পড়ে। এমনিতেই নতুন কোষ সৃষ্টির জন্য ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং এক্সফোলিয়েশন জরুরি। ক্লিনজিং মেথডের চর্চা যত ভালো হবে, ততই ত্বকের ন্যাচারাল রিপেয়ার প্রসেস দ্রুত হবে। ত্বকে মেকআপ অবশিষ্ট থেকে গেলে সে প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। উজ্জ্বলতা চলে যায়। নির্জীব মনে হয় ত্বক।

ময়লা এবং মেকআপ ত্বকে থেকে গেলে যে বিশেষ ক্ষতি হয়, তাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে এনভায়রনমেনটালি-ইনডিউসড অক্সিডেটিভ ড্যামেজ। এই ক্ষতির কারণে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়, তার সুরক্ষা দেয়াল দুর্বল হয়ে পড়ে, যা থেকে চেহারায় অকালবার্ধক্য দেখা দেয়। এ ব্যাপারে ২০১৩ সালে ডেইলি মেইল এক বিশেষ নিরীক্ষা চালায়। তাতে একজন নারীকে বলা হয়, এক মাস তিনি মুখ ধুতে পারবেন না। বাসি মুখেই প্রতিদিন মেকআপ করতে হবে এবং প্রাত্যহিক কাজকর্ম করে সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়তে হবে। এক মাস পর দেখা যায়, ওই নারীকে অনেক বুড়োটে লাগছে। গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী মাত্র ত্রিশ দিন মুখত্বক পরিষ্কার না করার ফলে তার বয়স বেড়ে গিয়েছিল কমপক্ষে দশ বছর।

স্বাভাবিক ত্বকে যতটা না ক্ষতি হয়, তার থেকে বেশি হয় সংবেদনশীল ত্বকে। আর ব্রণপ্রবণ হলে তো কথাই নেই। তৈলাক্ত ত্বক বা ব্রণযুক্ত ত্বকে মেকআপসহ ঘুমিয়ে পড়লে তার ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ। কারণ সাধারণ ত্বক যতটা ক্ষতি সহ্য করতে পারে, এ ধরনের ত্বক ততটা পারে না। ফলে সৃষ্টি হয় নানা রকম ইনফেকশন। চিকিৎসকদের মতে, যেকোনো সংক্রমণ থেকে প্রাথমিকভাবে ত্বকের দেয়ালই সুরক্ষা দেয়। ব্রণপ্রবণ বা সংবেদনশীল ত্বকের সেই সুরক্ষা দেয়ার ক্ষমতা এমনিতেই থাকে না, তার উপর যদি মেকআপজনিত ড্যামেজের শিকার হয়, তাতে ক্ষতি কেমন হতে পারে, বলাই বাহুল্য।

তা ছাড়া বেশির ভাগ মেকআপ পণ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক, রঙ ও সুগন্ধি থাকে, দীর্ঘ সময় সেগুলো ত্বকে স্থায়ী হলে তাৎক্ষণিকভাবে দেখা দিতে পারে নানা রকম র্যাশ। বিশেষ করে এটি রোজাশিয়া নামক র্যাশ সৃষ্টির প্রধান একটি কারণ। লাল লাল ছোট ছোট ঘামাচির মতো র্যাশেও ভরে যেতে পারে ত্বক। যেগুলো সহজে নিরাময়যোগ্য নয়।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, যত ক্লান্তিই লাগুক না কেন, ঘুমাতে যাবার আগে নিখুঁতভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে ত্বক। ড. চু আরও বলেছেন, সবচেয়ে ভালো হয় ত্বকের ধরন জেনে নিয়ে তা কীভাবে পরিষ্কার করতে হবে, সে ব্যাপারে একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেয়া। এমনিতে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, দিনে কমপক্ষে দুবার ত্বক পরিষ্কার করা। মুখে যদি ভারী মেকআপ নেয়া হয়, তাহলে রাতে সেটি তোলার জন্য প্রথমেই ব্যবহার করতে হবে মেকআপ ওয়াইপ। এটি এক রকম ভেজা টিস্যু, যা মেকআপ তোলার জন্য বিশেষভাবে তৈরি। স্বাভাবিক বা শুষ্ক ত্বক হলে ব্যবহার করতে হবে নরম ক্লিনজার। তৈলাক্ত ত্বকে সাধারণ ক্লিনজারের পরিবর্তে বেছে নিতে হবে এক্সফোলিয়েটিং ক্লিনজার, যাতে আলফা-হাইড্রক্সি অ্যাসিড থাকে। আর ত্বক ব্রণপ্রবণ হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়াই ভালো। কারণ, এতে প্রয়োজন টপিক্যাল ট্রিটমেন্ট, যাতে থাকে ওই ত্বকে প্রযোজ্য সব উপাদান।

Content Credit:Canvasmagazine

No comments:

Post a Comment